Pregnancy tips in bangla ! গর্ভবতী হওয়া যে কোনো বিবাহিত মহিলার কাছে একটি পরম আনন্দের বিষয় । কিন্তু গর্ভ অবস্থায় কেমন জীবন যাপন ও খাওয়া দাওয়া করা দরকার তা বেশিরভাগ মহিলার অজানা।
এখানে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কিছু পরামর্শ যা একজন গর্ভবতী মহিলাকে সুস্থ ও সুন্দর সন্তান জন্ম দিতে সহায়তা করবে।
গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে দেখা দেয় নানা পরিবর্তন। বদলে যায় হরমাোন নিঃসরণের হার। শরীরের ভিতরে আর বাইরে নানা অদল-বদল তখন নারীকে বিব্রত করে তাোলে।
এই অবস্থায় তাই খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়েই বিশেষ সচেতন হওয়া দরকার।
গর্ভাবস্থায় নারীকে যে খাবার দেওয়া প্রয়াোজন তাকে এক কথায় প্রেগন্যান্সি ডায়েট বলা যায়। এই ডায়েট অবশ্যই পুষ্টিকর হবে ভাবী মা ও ভ্রণ শিশুর সুস্বাস্থ্যের স্বার্থেই।
List Pregnancy tips in Bangla!
- সাধারণ খাদ্য তালিকায় যে ক্যালরি ভ্যালু থাকে তার থেকে কুড়ি শতাংশ বেশি থাকা দরকার।
- এ সময়ের খাদ্য তালিকায় যে যো উপাদানগুলি একান্ত জরুরি তা হল প্রাোটিন, ভিটামিন এ, ডি ও ই, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (ভিটামিন-সি), বি-ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়াোডিন, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম।
- গর্ভাবস্থায় প্রাোটিনের প্রয়াোজনীয়তার প্রধান কারণ হচ্ছে এর সাহায্যে ভ্রণের প্রয়াোজনীয় বৃদ্ধি ও পুষ্টি। প্ল্যাসেন্টা জরায়ু স্তনের সুস্থতার জন্য এ সময় প্রাোটিন জরুরি। দেখা গেছে যে অন্তত বাড়তি ১০ গ্রাম প্রাোটিন এক্ষেত্রে বিশেষ দরকার এবং সেটা প্রধানত আসে প্রাণীজ উৎস যেমন মাংস, দুধ, মাছ, ডিম ইত্যাদি থেকেই।
- খনিজ বস্তু বা মিনারেলের মধ্যে ক্যালসিয়াম ফসফরাস ও আয়রনের চাহিদা শরীরের থাকে। বাড়তি প্রাোটিন থেকেও বেশ কিছুটা ফসফরাস পাওয়া যায়।
- আয়াোডাইজড লবণ গর্ভাবস্থায় বিশেষ উপযাোগী। গর্ভাবস্থায় শেষ তিন মাসে ক্যালসিয়াম অন্তত ১২ গ্রাম প্রত্যহ গ্রহণ করা দরকার। আয়রনের প্রধান ভূমিকা হচ্ছে রক্তে হিমাোগ্লোবিন তৈরি করা। কারণ আয়রনের অভাবে যথাযথভাবে এইচ বি সিনথেসিস হবে না। রক্তে এর পরিমাণগত গুণমান কমে যাবে।
- ভাবী মায়ের অ্যানিমিয়া দেখা দেবে। এই প্রবণতা বন্ধ করার জন্য খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকা দরকার। গর্ভবতী নারীর জন্য দরকার প্রত্যহ ৪ মি. গ্রাম। এর কম হলে তার পরিপূরক হিসেবে ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট হিসেবে ফেরাস উপাদানযুক্ত লবণ দেওয়া যেতে পারে।
- শর্করা বা স্নেহজাতীয় খাদ্য উপাদান পরিমাণগতভাবে গ্রহণ করা দরকার যাতে খাদ্য তালিকায় ভ্যালু ঠিক থাকে। এ ক্ষেত্রে ভিটামিনের ভূমিকাও বিশেষভাবে প্রয়াোজনীয়। রক্তোর আর বি সি তৈরিতে ফলিক অ্যাসিডের বিশেষ ভূমিকা আছে যার অভাবে মেগালাোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হয়।।
- ফলের মধ্যে কমলা লেবু ও সাধারণ লেবু বিশেষ উপযাোগী। গর্ভাবস্থায় বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া দরকার। প্রত্যহ অন্তত ২ থেকে ২.৫ লিটার জলীয় পদার্থ গ্রহণ করা জরুরি। এই জলীয় পদার্থের মধ্যে আছে জল, দুধ,চা, ফলের রস, জুস ইত্যাদি। |
- আমাদের মত ট্রপিক্যাল দেশে নুন গ্রহণ ৫ থেকে ১০ মি. গ্রা. বিশেষভাবে দরকার কারণ এর বেশ কিছুটা ঘামের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যায়। এবার লাোকাল তথা সাধারণ হাইজিনের ব্যাপারে কিছু আলাোচনা করা যাক।
- প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় যা ফল ও সবজি যথেষ্ট পরিমাণে খেলে কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। প্রয়াোজনে মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া (৪ থেকে ৬ চামচ) রাতে শাোবার সময় খেলে উপকার হতে পারে। ইসবগুল হাস্কও চলতে পাড়ে। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গিয়ে কেউ যেন সেলফ মেডিকেশন না করেন। গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ারই অভ্যাসে নিয়ন্ত্রণের অভাব দেখা দিতে পারে। স্ফীতকায় জরায়ু, কর্ম ক্ষমতার স্বল্পতা এবং বিভিন্ন ওষুধের প্রয়াোগের জন্যই এটা হয়। এর থেকে অর্শ ও ফিসারও দেখা দিতো পারে।
- সন্তান প্রসবের নির্দিষ্ট সময় থেকে অন্তত ছয় সপ্তাহ আগে ভাবী মায়েদের কাজকর্ম থেকে সাময়িক বিরতি নেওয়া দরকার। গৃহস্থালীর হালকা কাজ করতে পারেন।
- মুক্ত বাতাসে অল্প হাঁটা চলাও চলতে পারে। আর অবশ্যই তাকে মানসিক অবসাদ ও চাপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে, তা না হলে তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে ভাবী সন্তানের উপর।
- তবে গর্ভাবস্থায় প্রথম ও শেষ দিকে বিমান বা সাধারণভাবে কোন দূর যাত্রায় অংশ গ্রহণ করা উচিত নয়। গর্ভাবস্থায় প্রথম ও শেষ দিকে (এই
- সময়টাই সব থেকে বেশি জটিল) ঘুম ও বিশ্রামের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। এই সময়ে রাত্রে ৮ ঘণ্টার ঘুম ও মাঝ দুপুরে ২ ঘণ্টার বিশ্রাম বিশেষভাবে প্রয়াোজনীয়।
- দাঁত তাোলার ব্যাপার থাকলে সেটা লাোকাল অ্যানাসথেসিয়ার সাহায্যেই করা দরকার। দাঁতের কেরিস বা অন্য কোনও সংক্রমণ দেখা দিলে তা দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে ঠিক করতে হবো।
- এই সময় শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাও অত্যন্ত জরুরি। শাড়ি বা যে কোন পাোশাক কিছুটা ঢিলে করে পরা দরকার। প্রতিদিন পাোশাক বদল করে পরিচ্ছন্ন পাোশাক পরা উচিত। গর্ভাবস্থায় শরীরের ভারসাম্যে যে তারতম্য ঘটে (বিশোষত
- জরায়ুর স্ফীতির জন্য) তার ফলে গর্ভবতী মহিলার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এ বিষয়ে তার বিশেষ সতর্ক থাকা দরকার। গর্ভাবস্থায় শেষ দুই মাসে পুকুর বা অন্য কোনও অপরিচ্ছন্ন জলাধারে স্নান করা উচিত নয়। কারণ এই দূষিত জল জরায়ুতে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
- এ সময় মর্নিং সিকনেস বা ভাোরবেলা এক ধরনের অবসাদ দেখা দেয়, শরীরে একটা ঢিলেঢালা ভাব হয়। এজন্য অল্প হাঁটাহাঁটিদরকার।
- প্রয়াোজনে ট্যাবলেট-এর সাহায্য নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে জ্বালা উপসর্গ থাকে। সেক্ষেত্রে মশলাযুক্ত খাবার একেবারে পরিহার করা উচিত।
- শরীরে খিচুনি বা পিঠে ব্যথা দেখা দিলে শক্ত বিছানায় শুতে হবে। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেক-আপ এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি রক্তস্রাব শুরু হয়, পেটে ব্যথা করে, রক্তচাপ বৃদ্ধি বা মাথা ধরার উপসর্গ দেখা দেয় কিম্বা পা ফুলে যায়।
- Pregnancy tips in bangla এর শেষ পরামর্শ টেনশন, ভয়, দুশ্চিন্তা থেকে বিশেষত গর্ভযন্ত্রণার ভাবনা থেকে মুক্ত থাকা দরকার। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটু ভাঙা, পা সাোজা করে উপরে ওঠানাো, ঘন নিঃশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি নিজের ঘরে বসেই করা যায়।
সর্বোপরি গর্ভবতী মহিলাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে এবং নিজের ও ভবিষ্যতের সন্তানের জন্য পরামর্শ নেনে চলা দরকার।
Pingback:মেথির উপকারিতা আমাদের সুস্থ থাকার জন্য - Health Katha