Menu Close

সুগার কেন হয় ? সুগার থেকে উদ্ভূত নানা জটিল রােগের প্রতিকার

সুগার কেন হয়

সুগার কেন হয় ? এই প্রশ্নটি বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক পরিবারে অধিকাংশ মানুষের মনে দেখা দিচ্ছে। ডায়াবেটিস বা সুগারের মূল কারণগুলি আপনার জিনগত গঠন, পরিবারের ইতিহাস, জাতিগততা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত কারণগুলির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।

ডায়াবেটিস বা সুগারের কোনও সাধারণ কারণ নেই যা প্রতিটি ধরণের ডায়াবেটিস বা সুগারের সাথে খাপ খায়, কারণ ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণগুলি ব্যক্তি এবং ধরণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।

এই ক্ষেত্রে; টাইপ ১ ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণগুলি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণগুলির থেকে যথেষ্ট পার্থক্য করে। একইভাবে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণগুলি টাইপ ১ ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণগুলি থেকে পৃথক। 

আসলে, টাইপ ১ ডায়াবেটিস বা সুগার এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণগুলি খুব আলাদা। টাইপ ১ ডায়াবেটিস বা সুগার হ’ল একটি অটোইমিউন অবস্থা যেখানে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন উত্পাদন করতে পারে না, অন্যদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা সুগার হ’ল ইনসুলিনের প্রতিরোধী শরীরের প্রতিরোধ।

সুগার কেন হয় ? ডায়াবেটিস বা সুগার থেকে উদ্ভূত নানা জটিল রােগের প্রতিকার:

টাইপ ১ ডায়াবেটিস বা সুগার কারণ:

টাইপ ১ ডায়াবেটিস বা সুগার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বারা অগ্ন্যাশয়ের যে কোষগুলি ইনসুলিন তৈরি করে ধ্বংস করে দেয়। এটি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পর্যাপ্ত ইনসুলিন ছাড়াই শরীর ছেড়ে দিয়ে ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণ হয়।

এটিকে একটি অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া বা অটোইমিউন কারণ বলা হয় কারণ দেহ নিজেই আক্রমণ করে।

ডায়াবেটিস বা সুগারের কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই তবে নিম্নলিখিত কারণগুলি এতে জড়িত থাকতে পারে:

Advertisement
  • ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ।
  • খাবারের মধ্যে রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ।
  • অজানা উপাদান স্ব-ইমিউন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
  • অন্তর্নিহিত জেনেটিক স্বভাবটিও টাইপ ১ ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণ হতে পার।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা সুগার কারণ:

টাইপ ২ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণগুলি সাধারণত মাল্টিফ্যাক্টরিয়াল হয় – একাধিক ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণ জড়িত। প্রায়শই, সবচেয়ে অপ্রতিরোধ্য বিষয়টি টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা সুগারের পারিবারিক ইতিহাস।

এটি সম্ভবত টাইপ ২ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণ।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা সুগারের বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকির কারণ রয়েছে, যে কোনও বা সবগুলি এই অবস্থার বিকাশের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • মোটা হওয়া।
  • উৎশৃঙ্খল জীবনধারা বা জীবনযাপন।
  • বয়স বাড়া।
  • খারাপ খাদ্য অভ্যাস।

গর্ভধারণ বা অসুস্থতার মতো আরও একটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা সুগার টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা সুগারের ঝুঁকি কারণ হতে পারে।

গর্ভবতী ডায়াবেটিস বা সুগার কারণ:

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণগুলিও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা সুগার হিসাবে পরিচিত  তবে, বেশ কয়েকটি ঝুঁকির কারণ রয়েছে যা এই অবস্থার বিকাশের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে:

  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা সুগারের পারিবারিক ইতিহাস।
  • অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলকায়।
  • পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় সিন্ড্রোম থেকে ভুগছেন।
  • ওজনের একটি বড় বাচ্চা হয়েছে।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণগুলিও জাতিগততার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে – কিছু জাতিগোষ্ঠীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা সুগারের ঝুঁকি বেশি থাকে।

ডায়াবেটিস বা সুগার সুগার কেন হয় ? অন্যান্য কারণ:

  • অন্যান্য বিভিন্ন সম্ভাব্য ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণ রয়েছে। এর মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
  • ডায়াবেটিস বা সুগারের কারণ হিসাবে অগ্ন্যাশয় বা অগ্ন্যাশয়টি  হ’ল ডায়াবেটিস বা সুগার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, যেমন অগ্ন্যাশয়।
  • পলিসিস্টিক ওভরি সিন্ড্রোম (পিসিওএস)। পিসিওএসের অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল স্থূলত্বের সাথে যুক্ত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, এটি প্রি-ডায়াবেটিস বা সুগার এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা সুগারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
  • কুশিং সিনড্রোম। এই সিন্ড্রোম কর্টিসল হরমোনের উত্পাদন বৃদ্ধি করে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে কর্টিসলের একটি অত্যধিক পরিমাণে ডায়াবেটিস বা সুগার হতে পারে।
  • গ্লুকাগনোমা। ইনসুলিন উত্পাদন স্তর এবং গ্লুকাগন উত্পাদনের স্তরের মধ্যে সাম্যাবস্থার অভাবের কারণে গ্লুকাগোনিমাযুক্ত রোগীরা ডায়াবেটিস বা সুগার অনুভব করতে পারেন।
  • স্টেরয়েড-প্ররোচিত ডায়াবেটিস বা সুগার (স্টেরয়েড ডায়াবেটিস বা সুগার) ডায়াবেটিস বা সুগারের একটি বিরল রূপ যা গ্লুকোকোর্টিকয়েড থেরাপির দীর্ঘায়িত ব্যবহারের কারণে ঘটে।

ডায়াবেটিস বা সুগার থেকে উদ্ভূত নানা জটিল রােগের প্রতিকার:

আজকাল অধিকাংশ মানুষের ঘরেই ডায়াবেটিস বা সুগার রােগী আছে। অতএব ব্যাপারটা যেন অনেকটাই সাধারণ রােগের পর্যায়ভুক্ত, গা-সহা এবং সময়ের রােগ হিসাবে অনেক মানুষের কাছেই পরিচিত হয়ে গেছে।

কিন্তু অনেকেই হয়ত ততটা স্বাস্থ্য সচেতন না হওয়ার কারণে বা নানা কারণে জানেন না যে, ঘরে ঘরে চালু ও অনেকটা মেনে নেওয়া এই রােগটি থেকে কত রকমের মারাত্মক বিপত্তি দেখা দিতে পারে। 

Advertisement

চোখের রােগ:

ডায়াবেটিস বা সুগার থেকে রেটিনােপ্যাথি অর্থাৎ মারাত্মক চোখের রােগ দেখা দিতে পারে। রক্তক্ষরণ ও মাইক্রো-অ্যানিউজিয়ম থেকে শেষ পর্যন্ত অন্ধত্ব পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। 

কিডনি রােগ:

কিডনি সংক্রান্ত রােগ, হাইপাে অ্যালবুমিনিয়া নামক প্রােটিনের অভাব ঘটতে পারে। কিডনি সংক্রান্ত রেনাল ফেলিওর থেকে সারা শরীর ফুলে যেতে পারে। বিশেষত পায়ের পাতায় যদি ঘা বা ক্ষত দেখা দেয়।

সময়মতাে চিকিৎসা না হলে এ থেকে গ্যাংগ্রীনও (এক ধরণের পচন) দেখা দিতে পারে। সাধারণ রােগের তুলনায় এ রােগের সম্ভাবনা কুড়ি গুণ বেশি হতে পারে। ইসকিমিয়া, শরীরের প্রান্তদেশে প্রদাহজাত নিউরাইটিস হতে পারে।

সেকেন্ডারি ইনফেকশন দেখা দিয়ে সেই জায়গায় ঘা বাড়তে বাড়তে গ্যাংগ্রীনের সৃষ্টি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শরীরের প্রান্তদেশ, বিশেষত  পায়ের পাতা শল্য চিকিৎসার দ্বারা কেটে ফেলে বাদ দিতে হতে পারে।

সুগার ইম্পােটেন্সি:

ডায়াবেটিস বা সুগার নিউরােপ্যাথি এই রােগজাত এক সাধারণ ও ক্রনিক উপসর্গ। এর থেকে স্থায়ীভাবে যৌন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। যাকে বলা হয়ে থাকে ডায়াবেটিস বা সুগার ইম্পােটেন্সি। 

হাইপােগ্লাইসেমিয়া:

ওষুধ এবং ইনস্যুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস বা সুগার রােগীর হাইপাে গ্লাইসেমিয়া বা রক্তে হঠাৎ শর্করার মাত্রা অনেকটা কমে যাওয়াও একটি বিপজ্জনক ঘটনা।

এটি খুব বেশি | আকারের হলে রােগীর মধ্যে পাগলামির ভাব দেখা দিতে পারে, প্রচুর ঘাম হতে পারে। অজ্ঞানমতাে অথবা পুরােপুরি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এবং সর্বশেষে, কোমাতেও রােগের অবনতি হতে পারে।

এরকম প্রবণতার ক্ষেত্রে রােগীর পকেটে চিনি বা গ্লুকোজ রাখা প্রয়ােজন। উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যদি রােগী চিনি বা গ্লুকোজ খেয়ে নেয় তাহলে সে ক্রমশ সুস্থ বােধ করবে।

ডায়াবেটিস বা সুগার রােগীর অনেক সময় শরীর থেকে জল ও খনিজ বস্তুর বাড়তি নিঃসরণ ঘটে যার প্রতিক্রিয়ায় রক্তচাপ কমে যেতে পারে।

এছাড়া সাধারণত পঞ্চাশ বছরের পরে এই রােগীর রক্তনালী সংক্রান্ত রােগ দেখা দিতে পারে যার থেকে মৃত্যুও ঘটতে পারে।

হৃদরােগ দেখা দেয়:

হার্টের করােনারী আর্টারি বা ধমনীর মধ্যে প্রথমে অ্যাথরােসক্লেরােসিস বা ধমনীর মধ্যের চ্যানেলে স্বাভাবিক পথ বা মসৃণতা নষ্ট হয়ে গিয়ে অবশেষে হৃদরােগ দেখা দিতে পারে। 

চোখে ছানি পড়া :

ডায়াবেটিস বা সুগার থেকে চোখে ছানিও পড়তে পারে। ডায়াবেটিস বা সুগার রােগীর ক্ষেত্রে দূষণ প্রতিরােধ ক্ষমতা বেশ কিছুটা কমে যায়। যার ফলে সে স্বাভাবিকভাবেই নানা রােগে আক্রান্ত হয়।

চর্মরোগ ও ওজন হ্রাস :

এক্ষেত্রে নানা দূষণ সংক্রমণের মধ্যে বহুমুখ বিশিষ্ট ফোঁড়া  শরীরে দেখা দিতে পারে এবং এই দূষণ ছড়িয়ে মারাত্মক বিপত্তিও হতে পারে।

ফুসফুসে টিবি বা যক্ষ্মা ডায়াবেটিস বা সুগার রােগীদের একটা সাধারণ ঘটনা। ডায়াবেটিস বা সুগার রােগীর যদি ওজন হ্রাস হয় তাহলে।

টিবি রােগ সন্দেহ করা যেতে পারে। বিশেষ করে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই যারা খাদ্য তালিকা সীমায়িত করে থাকে।

প্রস্রাবেও সুগার:

ডায়াবেটিস বা সুগার রােগীদের প্রস্রাবেও সুগার দেখা দেয়। প্রস্রাবে গ্লুকোজের আধিক্য দেখা দিলে শরীরে নানা দুষণ প্রক্রিয়ায়, বিশেষত জীবাণু সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়ে ওঠে।

এর ফলে মূত্রনালীতে ঘনঘন বা বেশ কিছুটা স্থায়ীভাবে দূষণ সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়ােটিক ব্যবহারের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া দরকার।

ডায়াবেটিস বা সুগারের এই রােগ প্রদাহ থেকে মেয়েদের যােনিনালীতে এক ধরনের চুলকানি ও তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। এই উপসর্গ থেকে নিরাময় পেতে চিকিৎসকের বিশেষ পরামর্শ নেওয়া দরকার। 

মাংসপেশী নষ্ট হওয়া :

এই রােগের প্রকোপের ফলে শরীরের মাংসপেশী নষ্ট হতে থাকে, যন্ত্রণা হয়, পায়ে এবং শরীরের নানা অংশে এক ধরনের অবসন্নতা দেখা দেয়। 

এই রােগ থেকে ডায়রিয়াও দেখা দেয়। অনেকে প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে না। অল্পবয়সীদের ক্ষেত্রে যদিও ডায়াবেটিস বা সুগার সাধারণত দেখা যায় না, তবে। ক্ষেত্রে এই রােগের প্রকোপ হলেও হতে পারে। 

গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি :

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা সুগার অনেক সময় মারাত্মক আকৃতি নেয় বিশেষত রােগীর যদি কোনাে অস্ত্রোপচার করাতে হয় এবং সেক্ষেত্রে অবশ্যই সুগারকে নিয়ন্ত্রণে এনেই রােগিণীর চিকিৎসা করাতে হবে।

গর্ভবতী অবস্থায় চিকিৎসা ছাড়া ডায়াবেটিস বা সুগার রােগীর প্রসব হলে অনেক ক্ষেত্রেই মৃত সন্তানের প্রসব ঘটে থাকে।

বিশেষভাবে মনে রাখবেন:

সুগার কেন হয় তার কারণ হল আমাদের খাদ্য অভ্যাস ও জীবন যাপন প্রক্রিয়া আমাদের মধ্যে নানা রোগব্যাধি সৃষ্টি করছে। তারমধ্যে সুগার বা ডায়াবেটিস অন্যতম।

আমাদেরকে সুগার বা ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত রাখতে হলে আমাদের জীবন যাপন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে।
যদি আমরা আমাদের জীবন যাপন ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তন আনতে পারি তাহলে আমরা অবশ্যই রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে পারব

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *