Cancer symptoms in Bengali . হৃদরোগের পরে ক্যানসারই দ্বিতীয় ‘কিলার ডিজিজ। মানব শরীরে ক্যানসার দেখা দেওয়ার প্রক্রিয়া, কার্যকারণ, বিভিন্নস্তরে এর নির্ণয়, নিরাময় ইত্যাদি ব্যাপারগুলো নিয়ে সারা বিশ্ব জুড়েই নানা পরীক্ষা চলছে।
যদি আপনার কয়েক সপ্তাহ ধরে লক্ষণ থাকে তবে ডাক্তারের সাথে দেখা করা জরুরি। ক্যান্সার অনেকগুলি লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে তবে এই লক্ষণগুলি প্রায়শই অসুস্থতা, আঘাত, সৌম্য টিউমার বা অন্যান্য সমস্যার কারণে ঘটে।
আপনার যদি এমন লক্ষণ দেখা যায় যা কয়েক সপ্তাহ পরে ভাল না যায়, আপনার ডাক্তারকে দেখান যাতে সমস্যাগুলি নির্ণয় করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিত্সা করা যায়। প্রায়শই ক্যান্সারে ব্যথা হয় না, তাই ডাক্তারকে দেখার আগে ব্যথা অনুভব করার জন্য অপেক্ষা করবেন না।
শরীরের কোষগুলির বিভাজন (সেল ডিভিশন) হয় কতক নিয়মের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এই কোষ বিভাজন, যখন অনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে ঘটতে থাকে তখন পার্শ্ববর্তী শরীরী কাঠামোগুলো এর প্রভাব থেকে বাদ যায় না।
এইভাবে রোগ ছড়াতে থাকে, যাকে বলা হয় মেটাস্টেসিস’ এবং এর ফলে রোগীর মৃত্যু হয়। শরীরের যে-কোন জায়গাতেই ক্যানসার হতে পারে। আবার কিছু কিছু ক্যানসার (ম্যালিগন্যান্সি) খুব আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়।
Cancer symptoms in Bengali (ক্যান্সারের প্রাথমিক ও অজানা লক্ষণ):
বেশ কিছু কিছু উপসর্গ আছে সেগুলো সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের বিশেষ সতর্ক থাকা দরকার। যদিও সেইসব উপসর্গ দেখা দিলেই যে ক্যানসার হবে তার কোন মানে নেই। তবুও এইসব উপসর্গের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
স্তনে পরিবর্তন হয়:
- আপনার স্তনে বা আপনার বাহুতে ফোলা বা দৃঢ়তা অনুভূতি।
- স্তনবৃন্ত পরিবর্তন বা স্রাব।
- ত্বক যা চুলকানির মতো, লালচে, খসখসে, ডিম্পল্লিক বা কুঁচকানো।
মূত্রাশয় পরিবর্তন হয়:
- প্রস্রাব করতে সমস্যা হয়।
- প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হয়।
- প্রস্রাবে রক্ত।
রক্তপাত বা ক্ষতচিহ্ন, অজানা কারণে: (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ Cancer symptoms in Bengali).
- শরীরের যে কোনো জায়গায় ক্ষত সৃষ্টি হয়।
- শরীরের যে কোনো জায়গায় রক্ত পাত ঘটে।
অন্ত্রের পরিবর্তন হয়:
- মলগুলিতে রক্ত।
- অন্ত্র অভ্যাস পরিবর্তন।
কাশি বা হাঁচি:
- দীর্ঘস্থায়ী কাশি বন্ধ না হওয়া।
- গলায় কর্কশ আওয়াজ।
খাওয়ার সমস্যা:
- খাওয়ার পরে ব্যথা (অম্বল বা বদহজম যা দূরে যায় না)।
- গিলে ফেলাতে সমস্যা।
- পেট ব্যথা।
- বমি বমি ভাব এবং বমি।
ক্ষুধা পরিবর্তন হয়:
- খাবারে অরুচি বা খিদে না পাওয়া।
ক্লান্তি যা মারাত্মক এবং স্থায়ী হয়:
- কর্ম শক্তি কমে যায়।
- ক্লান্তি স্থায়ী হয়।
জ্বর বা রাতে অচেনা কারণে ঘাম হয়:
- বিশেষ করে রাতের দিকে জ্বর আসা।
- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ।
মুখের পরিবর্তন হয়:
- জিহ্বায় বা আপনার মুখে একটি সাদা বা লাল প্যাচ।
- ঠোঁট বা মুখে রক্তপাত, ব্যথা বা অসাড়তা।
স্নায়বিক সমস্যা: (বিশেষ Cancer symptoms in Bengali)
- মাথাব্যাথা।
- হৃদরোগের আক্রমণ।
- দৃষ্টি পরিবর্তন।
- কানে শোনা পরিবর্তন।
- মুখ ফেলা।
ত্বকের পরিবর্তন হয়:
- একটি মাংস রঙের গল্ভ যা রক্তাক্ত হয় বা খসখসেটে পরিণত হয়।
- একটি নতুন তিল বা বিদ্যমান তিল পরিবর্তন।
- এমন এক কালশিটে যা নিরাময় করে না।
- জন্ডিস (ত্বক এবং চোখের সাদা অংশে হলুদ হওয়া) ।
- ঘাড়, আন্ডারআর্ম, পেট এবং কোঁকড়ানো যেমন কোথাও ফোলা ।
অজানা কারণে ওজন হ্রাস বা ওজন হ্রাস:
- অস্বাভাবিক ভাবে ওজন কমে যায়।
কি কি কারণে ক্যানসার হতে পারে?
এখন প্রশ্ন, কি কি কারণে ক্যানসার হতে পারে? ক্যানসার হওয়ার উপাদান। সমূহ-ই বা কি কি, যাকে কার্সিনোজেনিক এজেন্ট বলা হয়? ফিজিওলোজিক্যাল এজেন্টের মধ্যে দেখা গেছে আলট্রাভায়োলেট রে, রেডিয়েশন এবং শরীরে ক্রমান্বয় উত্তাপ প্রয়োগের ফলে বা আয়োনাইজিং রেডিয়েশন নিয়ে যারা কাজ করেন—যেমন, রেডিওলজিস্ট, রেডিওগ্রাফার—এদের মধ্যে লিউকিমিয়ার ঘটনা অন্যান্য মেডিকেল পার্সোনালদের থেকে ১০ গুণ বেশি।
সেজন্য কাজ করার সময়ে এদের লেড অ্যাপ্রন, লেড কভার ব্যবহার করতে হয়। বুকে ‘ফিল্ম ব্যাচ’ নামে একটি মনিটারিং থাকে যা নির্দিষ্ট সময়ের পরে ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারে পাঠিয়ে রিডিং নিয়ে দেখা হয় সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীর শরীরে কতটা রেডিয়েশন হ্যাজার্ড দেখা দিয়েছে।
হিট ক্যানসার দেখা দেয় রিভার্স স্মোকিং থেকে। কাশ্মীরীরা মাটির পটে রাখা আগুন পেটের উপর বুলিয়ে রাখে এবং কাংগ্রি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। কেমিক্যাল এজেন্টগুলোর মধ্যে আছে আলকাতরা, রং, বিভিন্ন ধরণের ধাতু (লোহা, ক্রমিয়াম, নিকেল ইত্যাদি) মিনারেলসের মধ্যে আছে অ্যাসবেসটস নানা কৃত্রিম রং ইত্যাদি।
যথেষ্ট নিরোধক ব্যবস্থা না নিয়ে যাঁরা এইসব বস্তু নিয়ে কাজ করে থাকেন তাদের দূর ভবিষ্যতে ক্যানসার হতে পারে। নিউট্রিশন্যাল এজেন্টস বা পুষ্টির অভাবজনিত কারণেও ক্যানসার হতে পারে।
প্রোটিন, ভিটামিন, আয়োডিন ইত্যাদি নানা পুষ্টি-উপাদানের অভাব এ ব্যাপারে বিশেষ উল্লেখ্য। তবে ভাইরাস থেকে ক্যানসার কতটা হয় কি না হয় তা এখনও প্রমাণিত হয়নি।
আঘাত, ক্রমাগত ঘর্ষণ জ্বলুনি থেকেও ক্যানসার দেখা দিতে পারে। পোশাক পরিচ্ছদের কোন অংশ যদি খুব শক্ত করে শরীরের সঙ্গে আটকে পরা হয় তাহলে সেখানে ঘা দেখা দিতে পারে যার থেকে দূর ভবিষ্যতে, বিশেষত বিনা চিকিৎসায় থাকলে ক্যানসার হতে পারে।
এছাড়া ক্যানসারের অন্যান্য কারণ হিসাবে ক্রনিক ইরিটেশনের মধ্যে আছে পেপটিক আলসার, আলসারেটিভ কোলাইটিস, ক্রনিক সার্ভিসাইটিস, টিউবারকুলাস আলসার ইত্যাদি রোগ স্থায়ীভাবে চেপে থাকা ক্রনিক ইনফ্লেমেশন।
যে-কোনও আলসার বা ঘা-এর ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। বিশেষত সেই আলসারের উপর বাড়তি ও ক্রমান্বয়ে ইনফ্লামেশন বা ইরিটেশন যেন না হয়।
এরকম আলসারের ক্ষেত্রে উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস ও চিকিৎসা-পদ্ধতি চালু রাখা দরকার
তা না হলে প্রারম্ভে যা নির্দোষ ঘা, পরে তাই-ই ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। রং করা মশলাযুক্ত খাবার খেলে পেটে ক্যানসার হতে পারে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। বিশেষত পঞ্চাশ বছর ছাড়িয়ে গেলে।
খাদ্যনালী ও ফুসফুসের ক্যানসার মেয়েদের থেকে ছেলেদের বেশি হয়। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তান
হয়েছে যাঁদের, তাঁদের স্তনের ক্যানসার কম হয়। যাঁদের সন্তান হয়নি তাদের ক্যানসারের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কিভাবে থেকে সুস্থ্য করবেন নিজেকে ?
যদি উপরের কোনো লক্ষণ দীর্ঘ দিন দেখা যায় তাহলে পার্সোনাল হাইজিন বা ব্যক্তিগত শরীরী পরিচ্ছন্নতা ঠিকমত পালন করা গেলে মুখের ত্বকের ও গোপনাঙ্গের ক্যানসার রোধ অনেকটাই করা সম্ভব। স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতাবো ধ থেকেই কিন্তু এটি করা সম্ভব।
প্রি-ক্যানসারাস স্টেজে অর্থাৎ ক্যানসার হওয়ার আগের অবস্থায় কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থাদি নিলে বিশেষ কয়েকটি অঙ্গ-উপাঙ্গের ক্যানসার দূর করা সম্ভব।
যেমন মেয়েদের সার্ভিক্স ছিড়ে যাওয়া, অন্ত্রে একাধিক পলিপ হলে, তিল বা জডুল দেখা দিলে, ক্রনিক গ্যাসট্রাইটিস ও সার্ভিসাইটিস হলে আগাম সতর্কতা ও চিকিৎসার সাহায্য নিলে ক্যানসারের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
মেনোপজের পরে অর্থাৎ মেয়েরা যখন আর ঋতুমতী থাকে না। (সাধারণত ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে) তখন যদি দেখা যায় যে, রক্তস্রাব হচ্ছে তাহলে কোন মহিলা যেন উল্লসিত হয়ে ভেবে না বসেন যে, আবার বোধহয় যৌবন ফিরে এলো।
বরং মাসিক বন্ধ হবার পরে এই বয়সে রক্তস্রাবের অর্থ কখনও কখনও ক্যানসারের পূর্বলক্ষণ হিসাবেই ধরা হয়। কাজেই এরকম উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার এবং সত্যিই এক্ষেত্রে ক্যানসার হলে অস্ত্রোপচার করে (হিস্ট্রেকটোমি) এই কালব্যাধি সারিয়ে তোলা সম্ভব।
Cancer symptoms in Bengali এর প্রাথমিক ও অজানা লক্ষণ দেখা দিলে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার:
সমস্ত রকমের ওষুধ, কসমেটিকস্ এমনকি আমরা যেসব খাবার খাই সেগুলি বিশেষভাবে পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন যে, তার মধ্যে ক্যানসারের উপাদান আছে কিনা।
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যবস্তুর মধ্যেও, যেমন ধরুন শাকসবজি ইত্যাদিতেও পেস্টিসাইড ফার্টিলাইজারের অর্থাৎ রাসায়নিক সারের ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায়।
সস্তা কসমেটিক্সের ব্যবহার থেকে ভয়ঙ্কর চর্মরোগটিও হতে পারে। শরীরে কোথাও টিউমার হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।জনবসতির মধ্যে বিপজ্জনক কারখানা থাকা উচিত নয় এবং দূষণ ছড়ায় এমন শিল্প-কারখানায় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানো দরকার।
আর্লি ডিটেকশন ও নানা ধরণের নিরোধক ব্যবস্থা নিতে পারলে ক্যানসার শতকরা পঞ্চাশ ভাগ ক্ষেত্রেই দূর হতে পারে। দেরি করলেই কিন্তু তা অনেক সময়ই চিকিৎসার অতীত হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে মাস স্ক্রিনিং’ অর্থাৎ সাধারণভাবে ও নিয়মিত অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা ও আধুনিক ডায়াগনোস্টিক পরীক্ষার দ্বারা চেক-আপ করা দরকার। যাতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসার হওয়ার আগের অবস্থাতেই রোগ নির্ণয় সম্ভব।
নানা ডায়াগনোস্টিক চিকিৎসা পদ্ধতি এই কলকাতা শহরেও এখন সহজলভ্য। তবে মেটাসটেসিস হয়ে গেলে অর্থাৎ রোগ ছড়িয়ে পড়লে অবশ্যম্ভাবী ভাবেই রোগীর জীবন সংশয় দেখা দেয়।
বিশেষ করে মনে রাখবেন:
যদি আপনার কয়েক সপ্তাহ ধরে উপরের এই লক্ষণ গুলি থাকে তবে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করা জরুরি।
Pingback:মেথির উপকারিতা আমাদের সুস্থ থাকার জন্য - Health Katha
Pingback:ক্যান্সার কী,কারণসমূহ, চিকিৎসা, প্রকারভেদ ইত্যাদি - Health Katha