চুলকানি কি, কারন, চিকিৎসা,এর থেকে ক্যান্সার হতে পারে

চুলকানি যদিও সাধারণভাবে একটি রোগ-উপসর্গ, তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি জটিল রোগের কারণেও দেখা দেয়। স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবও এর একটা কারণ। অনেকে আবার ‘চুলকাইতে আরাম বোধ করেন বলেও এই রোগ পুষে রাখেন। যথাসময়ে ও যথাযথভাবে চিকিৎসাও করেন না। যাই হোক এই রোগ উপসর্গের সাধারণত্ব ও জটিলতা সম্পর্কে আমাদের  জানা দরকার কারন চুলকানি থেকে ক্যান্সার হতে পারে।

চুলকানি কি?

চিকিৎসা পরিভাষায় চুলকানিকে বলা হয় রাইটিস। এই উপসর্গ দেখা দিলে সাধারণত লোকে উত্তেজিতভাবে স্থানীয়ভাবে বা সামগ্রিকভাবে শরীর চুলকোতে থাকেন এবং এর পরে এক ধরণের জ্বালারও সৃষ্টি হয়। এই চুলকানি শরীরে স্থানীয়ভাবে দেখা দেয় আবার বিশেষ কোনও রোগ-প্রদাহ থেকে শরীরের অনেকটাই আবৃত করে ফেলে।

 হিষ্টামি নামক এক ধরণের অ্যামাইনই এই ধরণের শারীরিক অনুভূতির কারণ। অনেক সময় আপাত দৃষ্টিতে বোধগম্য হয় না।

চুলকানির  কারন কি ?

এই উপসর্গের কারণগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখ্য হচ্ছে।

• ভারের রোগ ।
• লিম্ফোমা ।
• ডায়াবেটিস ।
• কিডনির অসুখ যেমন নেফ্রাইটিস ।
• নানান ধরণের ওষুধ প্রসূত প্রতিক্রিয়া এমন কি ক্যানসার পর্যন্ত ।
• আবার অনেক সময় নানান কারণে চামড়া শুকিয়ে গেলে চুলকানি হতে পারে।
• বার বার স্নানের কারণে ।
• ইফথাইওসিস, শীতল আবহাওয়া, বাতাসে আদ্রর্তা অথবা শুষ্কতা, অ্যালার্জি, নানান ধরণের রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা এমনকি মানসিক আবেগজনিত কারণেও এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

এটা মানসিক:

যদি আপনার ডাক্তার কোনও শারীরিক কারণ খুঁজে না পান তবে তা আপনার মনে হতে পারে। কিছু মানসিক অবস্থার কারণে মানুষ নিজেদের স্ক্র্যাচ বা নিজেরাই বাছাই করতে চায় তারা তাদের ত্বক কিছু সঙ্গে ক্রলিং মত মনে হতে পারে। কোন ফুসকুড়ি আছে, কিন্তু স্ক্র্যাচিং থেকে চামড়া ক্ষতি হতে পারে। বাধ্যতামূলক scratching একটি লক্ষণ হতে পারে:

• ডিপ্রেশন
• উদ্বেগ
• অবাধ্য-বাধ্যতামূলক ব্যাধি
• মনোব্যাধি
• Trichotillomania

আপনার চুলকানির কারণ নির্ণয়:

আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী আপনাকে শারীরিক পরীক্ষা দেবে এবং আপনার লক্ষণগুলি সম্পর্কে আপনাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করবে, যেমন:

• কতক্ষণ আপনার জ্বালা ছিল?
• এটা আসে এবং চলে যায় ?
• আপনি কি কোন বিরক্তিকর পদার্থের সাথে যোগাযোগ করেছেন?
• আপনার এলার্জি আছে?
• সবচেয়ে গুরুতর চুলকানি কোথায়?
• আপনি কোন ঔষধ গ্রহণ করছেন বর্তমানে?

আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী আপনার উত্তরগুলি এবং শারীরিক পরীক্ষা থেকে আপনার চুলকানোর কারণ নির্ধারণ করতে পারে না যদি আপনাকে আরো পরীক্ষা করতে হতে পারে।

পরীক্ষা:
রক্ত পরীক্ষা: একটি অন্তর্নিহিত অবস্থা নির্দেশ করতে পারে।
আপনার থাইরয়েড ফাংশন পরীক্ষা: থাইরয়েড সমস্যা বাতিল করতে পারেন।
ত্বক পরীক্ষা: আপনি কোনও অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া করছেন কিনা তা নির্ধারণ করতে।
আপনার ত্বকের স্ক্র্যাপিং বা বায়োপসি: আপনার সংক্রমণ আছে কিনা তা নির্ধারণ করতে পারেন।

একবার আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী আপনার তেজস্ক্রিয়তার কারণ চিহ্নিত করেছেন, আপনার সাথে চিকিত্সা করা যেতে পারে।
কারণ যদি কোনও রোগ বা সংক্রমণ হয় তবে তারা অন্তর্নিহিত সমস্যার জন্য সর্বোত্তম চিকিত্সার পরামর্শ দেবে।
যখন কারণটি আরো উপকারী হয়, তখন আপনি ক্রিমের জন্য একটি প্রেসক্রিপশন পেতে পারেন যা চুলকানি উপশম করতে সহায়তা করবে।

চুলকানির  চিকিৎসা:

উপরে উল্লিখিত কারণগুলি থেকে মুক্ত থাকতে পারলে এই সমস্যা নাও দেখা দিতে পারে। তবুও কারও শরীরে চুলকানি দেখা দিলে যে তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদী যেসব চিকিৎসা আছে সে সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হচ্ছে।

• বেশ কিছু মলম ।
• ঝাকিয়ে নেওয়া সুনির্দিষ্ট কিছু লোশন ।
• ইমালসন ।
• উদ্বায়ী অ্যানালজেসিকের প্রয়োগ ।
• সংশ্লিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করলে তা ফলপ্রসূ হতে পারে, ত্বক খুব শুষ্ক প্রকৃতির হলে স্নানের মাধ্যমে আর্দ্র করা দরকার। আবার ত্বক যদি খুব আর্দ্র হয়, তা হলে শুষ্ক উপাদান যেমন নির্দিষ্ট কিছু লোশন পাউডার, লোকাল, ড্রেসিং ইত্যাদির ব্যবহার দরকার।
• আবার মানসিক আবেগজনিত কারণে চুলকানি দেখা দিলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া দরকার হতে পারে।
• পোশাক যতটা মসৃণ হয় ততটাই ভাল।
• সাবান, ডিটারজেন্ট এবং কর্মসুত্রে নানান রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।
• অল্প স্নানের তেল দিয়ে স্নান করা। হাত-পায়ে নখ কেটে ফেলা বা পরিষ্কার রাখা বিশেষভাবে আবশ্যক।
• একান্ত প্রয়োজন না হলে শরীরে কোনও রোগ দেখা দিলে যতটা কম সম্ভব ওষুধ গ্রহণ করতে হবে এবং সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ বা নির্দেশ অনুযায়ীই করতে হবে।
• অনেক ক্ষেত্রে সাধারণভাবে রোগজনিত কারণে ছড়িয়ে পড়া চুলকানি ঈষদুষ্ণ স্নানে নিয়ন্ত্রিত হয়। পনেরো মিনিট ধরে প্রত্যহ দুই-তিনবার স্নান করা দরকার। তবে বয়স্ক রোগীদের বিশেষত যাঁদের ত্বক কিছুটা শুষ্ক তাদের এরকম স্নান তুলনামূলকভাবে কম করা উচিত।
• স্নানের পর বেশি ঘষাঘষি না করে আলতো করে জল মুছে ফেলা দরকার।
• চুলকানির প্রশমনে ল্যাকটোক্যালামাইন লোশন প্রয়োগ করলে কাজ হতে পারে এবং শুষ্ক ত্বকের মসৃণতা এনে দিতে পারে।
• একজিমা বা ডার্মাটাইটিসের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম সংশ্লিষ্ট স্থানে প্রতি রাতে ব্যবহারের ফলে কার্যকর হতে পারে।
• এছাড়া বাজার চালু নানান অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ যেমন অ্যাভিল, ইনসিডাল ইত্যাদির প্রয়োগ করা হয় বিশেষত অ্যালার্জিজাত চুলকানি উপসর্গের ক্ষেত্রে।
• স্কেবিস জাত চুলকানির ক্ষেত্রে সাবান দিয়ে স্নান করার পর অ্যান্টিস্কেবিস লোশন তেলের মতো গায়ে মাখা হয়।
• মানসিক কারণে যাঁদের এই উপসর্গ দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রে স্নায়ু প্রশান্তকারী ট্রাংকুইলাইজার দিলে বেশ কাজ হয়।
• রোগের জটিলতার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্টেরয়েড প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা আছে।

চুলকানি জন্য বাড়িতে যত্ন:

বাড়িতে, চর্বিযুক্ত চামড়া প্রতিরোধ এবং উপশম করার জন্য আপনি অনেক কিছু করতে পারেন।

• আপনার ত্বক hydrated রাখা একটি ভাল ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করে ।
• স্ক্র্যাচিং এড়ানো, যা চুলকানি খারাপ হতে পারে ।
• সাবান, ডিটারজেন্ট, এবং পারফিউম এবং রঙ রং ধারণকারী অন্যান্য পদার্থ থেকে দূরে থাকুন ।
• আখরোট বা বেকিং সোডা সঙ্গে একটি শীতল স্নান গ্রহণ ।
• ওভার-দ্য কাউন্টার বিরোধী-চেঁচানো ক্রিম চেষ্টা ।
• একটি মৌখিক অ্যান্টিহাইস্টামিন গ্রহণ ।

চুলকানি থেকে ক্যানসারও হতে পারে:

চর্বিযুক্ত ত্বক, যা প্রুটিটাস হিসাবে পরিচিত, এটি জ্বালা এবং অস্বস্তির একটি সংবেদন যা আপনাকে স্ক্র্যাচ করতে চায়। চুলকানি নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। খিটখিটে কিছু ক্যান্সার চিকিত্সা একটি প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

কোন ক্যান্সার খিটখিটে হতে পারে?

একটি ২০১৮  গবেষণা একটি হেলথ সিস্টেমে ১৬০০০ এরও বেশি ব্যক্তির প্রত্যয়িত উত্স নির্দেশ করে যে জেনারেলাইজড চুলকানি রোগীদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি যারা রোগীদের ত্বক খেতে পারে না। সাধারণত ক্যান্সারের সাথে যুক্ত যা

ক্যান্সারের ধরনের অন্তর্ভুক্ত:

• রক্ত সম্পর্কিত ক্যান্সার, যেমন লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা।
• পিত্তনালীতে ক্যান্সার।
• গ্লাস ব্লডার ক্যান্সার।
• লিভার ক্যান্সার।
• ত্বক ক্যান্সার।

ত্বক ক্যান্সার:

সাধারণত, ত্বক ক্যান্সার ত্বকের নতুন বা পরিবর্তিত স্পট দ্বারা সনাক্ত করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে, চটচটে জায়গাটি লক্ষ্য করা যায় এমন কারণ হতে পারে।

অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার

অগ্নিকুণ্ড ক্যান্সার সঙ্গে যারা খিটখিটে অভিজ্ঞতা হতে পারে। তবে, খিটখিটে ক্যান্সারের সরাসরি উপসর্গ নয়। পশুর নলকে আটকানো টিউমারের ফলে জন্ডিস বিকাশ হতে পারে এবং পিতলের মধ্যে রাসায়নিক পদার্থগুলি চামড়া প্রবেশ করে এবং খিটখিটে সৃষ্টি করতে পারে।

লিম্ফোমা:

চামড়া লিম্ফোমা, টি-সেল লিম্ফোমা, এবং হজকিন্স লিম্ফোমার একটি সাধারণ উপসর্গ। বেশিরভাগ ধরনের অ-হজকিনের লিম্ফোমাতে খিটখিটে কম সাধারণ। লিংকোমা কোষের প্রতিক্রিয়াতে ইমিউন সিস্টেম দ্বারা মুক্তি করা রাসায়নিকগুলির কারণে চুলকানি হতে পারে।

Polycythemia:

পলিসিটিমিয়া ভারতে, ম্যালোপোল্লিফিয়ারটিভ নেপ্ল্যাসাস নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠীর ধীরগতির রক্তের ক্যান্সারগুলির মধ্যে, তীব্রতা একটি উপসর্গ হতে পারে। ঝরনা একটি গরম ঝরনা বা স্নান পরে বিশেষভাবে দেখা হতে পারে।